ঝালকাঠি প্রতিবেদক ॥ নলছিটিতে ড্যানিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডানিডা) প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে অনিয়ময়ের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একইসাথে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, বরিশাল আঞ্চলিক শাখায়ও অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয়রা।
নির্দেশনার অনুকূলে সঠিক কাজ না করানো, বরাদ্দের টাকা ভাগবাটোয়ারার পাঁয়তারা এবং শ্রমিকের পরিবর্তে ভেকু (এঙ্কাভেটর) মেশিন দিয়ে মাটি কাটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও জালিয়াত চক্রের এক সদস্য এসব দুর্নীতি করেছেন বলে উল্লেখ করেন অভিযোগকারী ওই গ্রামের দিনমজুর বাদল হাওলাদার।
মূলত ডানিডা প্রকল্পের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ না করায়, সরকারের মহৎ উদ্দেশ্যে গ্রামের কর্মহীন মৌসুমে স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থান, স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কর্মক্ষম দুস্থ পরিবারগুলোর সুরক্ষা কার্যক্রম ভেস্তে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ৫নং সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মন্নান সিকদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এই কর্মসূচি সরকার গরিব মানুষের জন্য চালু করেছে। যারা গরিব মানুষের মজুরির টাকা আত্মসাৎ করতে চায়, তাদের পক্ষে আমি নেই। একবার নয়, শতবার তাদের বলা হয়েছে কিন্তুু আমার কথা শুনেনি তারা। তারা ভেকু মেশিন দিয়ে কাজ করিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতর সূত্রে জানা গেছে, ডানিডা প্রকল্পের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে নলছিটি উপজেলায় জলবায়ু সহনশীল গ্রামীন অবকাঠামো নির্মান কর্মসূচির প্রকল্প বাস্তবায়ন লক্ষ্যে উপজেলাধীন ৫ নং সুবিদপুর ইউনিয়ন ইছাপাশা কলেজ সংলগ্ন ব্রীজ থেকে ফকির বাড়ী হয়ে মুসল্লি বাড়ির শেষ মাথা পর্যন্ত কাজ শুরু করা হয় । চলতি বছরের সালের ৫ ফেব্রুয়ারি এ কর্মসূচির কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এলসিএস ১,২,৩ কার্যাদেশ অনুযায়ী ২৩ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৩ টাকার কাজ করার কথা। এতে হতদরিদ্র শ্রমিকের সংখ্যা (তালিকাভূক্ত) ৪৬ জন। প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক তিন শত টাকা মজুরিতে প্রকল্পে কাজ করবেন।
এই কাজে প্রত্যেক শ্রমিক প্রতি বৃহস্পতিবার নিজের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে মজুরির টাকা উত্তোলন করবেন। এক্ষেত্রে যার যার জব কার্ড ব্যাংকে প্রদর্শন করতে হবে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই উপজেলায় কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে কোনো নিয়মনীতি মানছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। বরাদ্দের টাকা বাগিয়ে নিতে প্রকল্পে শ্রমিক তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে স্থানীয়রা দুদকে অভিযোগ দেওয়ার পরে। জানা গেছে, ইউপি সদস্য ফিরোজ আলম সোহাগ যে শ্রমকি তালিকা প্রস্তুত করেছেন সেখানে তার পরিবারের সদস্যসহ নিকট আত্মীয় ও স্বজনদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। শ্রমিকদের জব কার্ড ও মজুরি উত্তোলনের ব্যাংক হিসাবের চেক বই সোহাগ তুলে নিয়ে অন্য স্থানে জমা রেখেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলাধীন ৫ নং সুবিদপুর ইউনিয়ন ইছাপাশা কলেজ ব্রীজ থেকে ফকির বাড়ী হয়ে মুসল্লি বাড়ির শেষ মাথা পর্যন্ত চলমান কাজে কোনো শ্রমিক উপস্থিতি ছিল না। সেখানে শ্রমিকের পরিবর্তে ভেকু মেশিনে মাটি কাটা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ঘন্টায় ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা চুক্তিতে ভেকু মেশিন দিয়ে প্রতিদিন মাটি কাটা হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রকল্পের কাজটি নামেমাত্র শেষ করে টাকা উত্তোলন করে ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন আমির সোহেল মল্লিক নামে এক প্রতারক। যিনি সরকারি দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তা, এমপি ও মন্ত্রীদের ১৫৬টি নকল সিল এবং অবৈধ অস্ত্রসহ ঢাকার মগবাজারে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। ওই ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মামলা নং ৬১। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। ওদিকে ভূমি দখলের অভিযোগে নলছিটি থানায় এই সোহেল মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলা নং ২০/১৯ নলছিটি থানা।
জানা গেছে, ডানিডা প্রকল্পের তিনটি এলসিএস কাজের সভাপতি সমুনা আক্তার, রেহেনা বেগম, লিলি বেগম এবং সাধারণ সম্পাদক জাহানারা বেগম, শাহীনুর বেগম ও তানিয়া বেগমকে কাগজে কলমে দায়িত্বে রেখে পুরো কাজটি করেছেন প্রতারক চক্রের হোতা আমির সোহেল মল্লিক এবং ইউপি সদস্য ফিরোজ আলম সোহাগ। ওদিকে কাজ না করিয়ে টাকা উত্তোলনের চেষ্টার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ হলে আত্মরক্ষার্থে সাজানো আরেকটি অভিযোগ দিয়েছেন সোহেল মল্লিক ও সোহাগ মেম্বার। সেখানে তারা এক সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনৈতিক অভিযোগ আনেন। এ বিষয়ে কথা বলা হলে অভিযুক্ত আমির সোহেল মল্লিক নিজেকে সচিবালয়ের ‘দালাল’ পরিচয় দিয়ে জানান, কাজটি তিনি এনেছেন। মূলত স্থানীয় কতিপয় লোকের প্রতিহিংসার কারনে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
ইউপি সদস্য মোঃ ফিরোজ আলম সোহাগ বলেন, শ্রমকি না পাওয়ায় ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে। কি করবো বলেন, শ্রমকি না পেলেও কাজতো বসিয়ে রাখা যাবে না। তাই করিয়েছি। তাহলে কেন মিথ্যা শ্রমিক তালিকা তৈরী করে জমা দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই মেম্বার বলেন, দেখেন কাজটিতো আমার না। এলসিএস সভাপতি/সম্পাদকরা এসব করেছেন।
তার কাছে এলসিএস সভাপতি সম্পাদকের মোবাইল নাম্বার চাইলে তিনি বলেন, যা বলার তার সাথে বলতে। মহিলাদের সাথে কথা না বলাই ভালো। পরক্ষণে মোবাইলে কল করে, সংবাদ না প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করেন। এমনকি তিনি জানান, যা একটু অনিয়ম হয়েছে তা শুধরে নিবেন। অন্যথায় তার বিল বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে বিশাল লোকসান হবে তার।
Leave a Reply